মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনের জন্যে
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না
প্রখ্যাত অসমীয় সঙ্গীত-শিল্পী ভূপেন হাজারিকা'জীর বাংলায় গাওয়া এই গানটি কোটি বাঙালি হৃদয় কে আজও অনুপ্রাণিত করে । মানুষের দুঃখ-কষ্ট , সামাজিক বঞ্চনা , ক্ষুধার্ত ভিটে-মাটিহীন উদ্বাস্তু মানুষের পাশে সমাজের মানবতাবাদী-সংগ্রামী মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে, তাদের পক্ষে কথা বলতে হবে -- ভূপেন'জীর এই গানটি মূলত তারই বার্তা বহন করে ।
ভিন্ন ধর্ম , ভিন্ন সংস্কৃতি , ভিন্ন জাতি অর্থাৎ দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারত ভাগ হয়ে ১৯৪৭ সালে যে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল - তা কেবলই মাত্র একটি কলঙ্কিত ইতিহাস । দেশ ভাগের পর পাকিস্তানে তৈরী হয় "শত্রু সম্পত্তি আইন" যা বর্তমানে বাংলাদেশে "অর্পিত সম্পত্তি আইন" নামে পরিচিত । এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বসতবাড়ি এবং চাষের জমি কেড়ে নেয়া হয় । আর হত্যা, লুণ্ঠন , ধর্ষণ, ধর্মীয় নিপীড়ন কারও অজানা নয় । পূর্ববঙ্গের তথা বাংলাদেশের এই নিপীড়িত মানুষগুলোই বেঁচে থাকার তাগিদে চলে আসে ভারতে । কিন্তু ভারতে এসে কি তাদের মুক্তি মেলে ? কখনই নয় । প্রতিনিয়ত পুলিশি নির্যাতিত , বসত ভিটে-মাটিহীন দুঃস্থ জীবন , নাগরিক পরিচয় পত্রের অভাব যার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা - রেশন মেলে না ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে এই বাঙালি উদ্বাস্তুদের জীবনে আজ চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে । সেদিন যেদিন বৈঠকে যারা এই মানুষগুলোর কথা না ভেবেই ভারত-পাকিস্তান কে ভাগ করে আলাদা আলাদা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে মরিয়া হয়ে চুক্তি সই করছিল তারা আজ এই কোটি কোটি উদ্বাস্তু হৃদয়ে এক একজন পরিচিত কলঙ্কিত ফিগার ।
আক্ষরিক অর্থে বিবেচনা করলে দেখা যায় - পূর্ব বাংলার হিন্দুদের রক্তের উপর দাড়িয়ে আছে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম ভারত ।
ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস এমন একজন "নিবেদিত প্রাণ" যিনি এই দুঃস্থ-অসহায় ভিটে-মাটিহীন মানুষদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলেন , তাদের হয়ে লড়াই করেন । আমরা ইতিমধ্যে সকলেই জানি যে, গত ০৬/০৩/২০১৭ ইং তারিখে অসমের ধমাজী জেলায় ডাঃ সুবোধ বিশ্বাস মহাশয়ের নেতৃত্বে ৫০-৬০ হাজার উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি "অধিকার আদায়" ভিত্তিক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । এবং বিশাল ৫-৬ কিলোমিটার রাস্তা বিস্তৃত একটি বিশাল মুক্তি মিছিলের আয়োজন করা হয় । কিন্তু পেছন থেকে কিছু দুষ্কৃতীকারী মিছিলের ওপর নিজেদের আসু ছাত্র সংগঠনের কর্মী পরিচয় দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় । কিছু সময় পর আতঙ্ক ছড়িয়ে অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে ওঠে । তখন মিছিলের কর্মীদের তুলে নিয়ে আসুর অফিসে মারধর করা হয় । এরপর দু’পক্ষই হামলা-পাল্টা হামলায় লিপ্ত হয় ।
ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস মহাশয় এই সুদীর্ঘ মিছিলের সামনে থাকায় এই ঘটনাগুলো তিনি ১০ মিনিট পরে জানতে পারেন । কিন্তু যেহেতু তিনি ঐ মিছিলের নেতৃত্বদাতা এবং NIBBUSS এর চালক সেহেতু তাকেই এই দুর্ঘটনার দ্বায় বহন করতে হয় । অসম প্রশাসন তার বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট বের করেন এবং আসু কর্মীরা তাকে ওয়ান্টেড ঘোষনা করে বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করেন । এছাড়াও তারা সুবোধ বিশ্বাস কে অসম সরকার এবং আসু সংগঠন বিরোধী হিসেবে ঘোষণা করেন । ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে যে অসহিষ্ণু বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল তা পরে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে ।
কিন্তু সুবোধ বিশ্বাস মহাশয় দীর্ঘদিনের দরিদ্র উদ্বাস্তুদের নিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যে কর্মসূচিগুলো পালন করেছেন তা পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় - তার আন্দোলন শুধুমাত্র ভিটে-মাটিহীন উদ্বাস্তু মানুষের পক্ষে যা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং অন্য কোন সংগঠন বিরোধী নয় তো বটেই । আমরা মনে করি এই সম্পূর্ণ ঘটনা বাঙালিদের সাথে ➡ অসম সরকার এবং আসু সংগঠনের ভুল-বোঝাবোঝির কারনে সৃষ্টি হয়েছে ।
এমতাবস্থায় আমরা বাঙালিরা অনতিবিলম্বে ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস বাবুর এরেস্ট ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের দাবি জানাই এবং আসু ছাত্র সংগঠন কে সৌহার্দ্য এর বার্তা দিয়ে বলতে চাই যে আপনারা ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আমাদের সাথে কথা বলুন । এবং আপনারা সেই তৃতীয় শক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন যারা বাঙালি.উদ্বাস্তুদের মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাঙালি-অসমীয়দের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরাতে উদ্যত হয়েছিল ।
আমরা অসমীয় সুশীল/শিক্ষিত/বুদ্ধিজীবী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি - অসমে অবস্থিত আমাদের মানবতাবাদী-সংগ্রামী নেতা ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস মহাশয়ের প্রান আজ বিপন্ন প্রায় । তাই আপনারা সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে আসুন , আমাদের সাথে আপনারা কথা বলুন। অসহায় সুবোধ বিশ্বাস মহাশয় এর পাশে দাড়ান ।
আপনাদের কাছে এটি আমাদের মানবিক আবেদন ।
ভূপেন'জীর ঐ গানটির একটি লাইন -
পুরানো ইতিহাস ফিরে এলে লজ্জা কি তুমি পাবে না
ও বন্ধু মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্যে
এই গানের ন্যায় আসুন আমরা উভয়েই যেন এমন কোনো ইতিহাস রচনা না করি যাতে আমাদের ভবিষ্যতে লজ্জা পেতে হয় ।
আমরা অসমীয় সঙ্গীত-শিল্পী ভূপেন হাজারিকা'কে ভালোবাসি , অসমীয় মানুষদের ভালোবাসি । আমরা আসু ছাত্র সংগঠন এবং অসম সরকারের জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি ।আমরা এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতে বিশ্বাস করি । অসমের মানুষ আমাদেরই ভাই । আমরা মনে করি অসমীয় এবং বাঙালিদের মধ্যে যে সাময়িক সংকট চলছে অতি শীঘ্রই তার উত্তরন ঘটিয়ে একে অপরের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে সমগ্র ভারতে দৃষ্টান্ত স্থাপনে সচেষ্ট হব ।
আমরা অসমীয় ভাইদের সবুজ
সঙ্কেতের অপেক্ষায় রইলাম !!
No comments:
Post a Comment