Saturday 3 February 2018

রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্ম চর্চা কেনো গুরুত্বহীন!


শিমুল টিকাদার

নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীন ভাবে চর্চা বা পালন করা মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার যখন তার গন্ডি পেরিয়ে ন্যায় ও সাম্যের মানদন্ডের মাথায় চেপে বসে তখন তাকে বলা হয় অনুপ্রবেশকারী। ভারতীয় রাজনীতিতে "ধর্ম" কে এভাবে আমরা একটি অনুপ্রবেশকারী সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি ।

বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত এই ধর্ম চর্চা হল একটি ব্যাক্তি-কেন্দ্রিক অধিকার যার লাভ-লোকসান এর দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে না । এমনকি রাষ্ট্র এই ধর্ম প্রচারের কোনো দ্বায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে না । কারন, এর ফলে রাষ্ট্রে ধর্মীয় ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। আদর্শ হিসেবে গনতন্ত্র হল এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে সব মানুষ সমান না হলেও এক অর্থে সমমর্যাদার অধিকারী। এরূপ সমাজে প্রত্যেকেই সমাজের অবিচ্ছেদ্য এবং একান্ত প্রয়োজনীয় অংশ।

দেশের সংবিধান এবং ধর্মগ্রন্থ  (যেকোনো) পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। কেননা কোনো একটি ধর্মগ্রন্থের জীবন-দর্শন একটি নির্দিষ্ট সময়কে আবর্তন করে গড়ে ওঠে যা সময়ের বিবর্তনের ফলে অনেকটাই মানুষের চাহিদার বিরুদ্ধাচারন করে। অপরদিকে "সংবিধান" মানুষের উপর গভীর পর্যবেক্ষণ এর ভিত্তিতে গড়ে ওঠে । তাছাড়া সংবিধান মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল - যার ফলে মানুষের জীবন আরও সহজ ও সচ্ছলতায় ভরে ওঠে। মানুষ হয়ে ওঠে স্বাধীন ।

"গনতন্ত্র" একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রক্রিয়া । "রাজনীতি" গণতন্ত্রের একটি অংশ মাত্র । গণতন্ত্র চর্চা বলতে রাজনীতি, অর্থনীতি,সমাজনীতি ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা এবং এর যথাযথ প্রয়োগ কে বোঝায়। একটি রাষ্ট্রের সুসংহত গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের আচরন নিয়ন্ত্রণ করে তাকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম ।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্ম চর্চা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে গণতন্ত্রের মান খুন্ন হয়েছে বা হচ্ছে বলে আমি মনে করি । বিগত দিনে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক দলগুলোর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির চেয়ে ধর্মীয় ও জাতিগত চাহিদা ও তত্ত্ব ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। আমরা আরও একটু বিস্তারিত আলোচনা করলে বুঝতে পারি, এই মুহূর্তে দেশে যত বেশী দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতিত হবেন তার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পাবেন বা পাওয়ার চেষ্টা করবেন কংগ্রেস নেতৃত্ব ঠিক তেমনি ভারতবর্ষে এই মূহুর্তে হিন্দু ধর্মের মানুষ নির্যাতিত হলে তার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করবেন বিজেপি নেতৃত্ব । সুতরাং কংগ্রেস এবং বিজেপি সুপ্রিমো তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে আলোচ্য ঘটনা ঘটলে এক পর্যায়ে উল্লসিত হন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । কেন্দ্রের শাসকদল নেতৃত্বের বয়স খুবই খুব বিধায় কংগ্রেস উন্নয়ন থেকে সাম্প্রদায়িক তত্ত্ব দিয়েই তাদের মোকাবিলা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তেমনি বিজেপিও ধর্মীয় বিভাজনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে চান।

এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়ের ভিত্তিতেই যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত।। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যার্থতা ঢাকার অন্যতম যন্ত্র হতে যাচ্ছে ধর্মীয় এজেন্ডা । সম্প্রতি বিজেপির রাম নবমী,  তৃণমূলের পুরোহিত সম্মেলন কিংবা সিপিএমের মিটিং এ শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন রাজনৈতিক অঙ্গনের মূল ধারা এবং এর গতিপথ কে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করবে বলে আমি মনে করি।

আজকে বিজেপির বিরুদ্ধে যে তীব্র সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ উঠেছে একটু গভীরে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে বিজেপির এই প্লাটফর্ম প্রায় ৭০ ভাগ তৈরী করে দিয়েছে পূর্বের শাসকদল। বিজেপি শুধু যায়গা বুঝে মসলা মাখানোর দ্বায়িত্ব টুকু নিয়েছে। একই ঘটনায় হেমন্ত-দীপঙ্কর-নিতাই এর থেকে আফযারুলের এর প্রতি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আজ বিজেপির হিন্দুত্ববাদ রাজনীতির প্লাটফর্মে পরিণত হযেছে। উভয়ের লক্ষ একটাই - ভোটব্যাংক । বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি থেকে পূর্বের শাসকদল কংগ্রেস কি খুব ভালো ছিল? তাও নয়!! আগে সবাই ফেজ টুপি পড়ত এখন সবাই কপালে তিলক চন্দন মাখছে। শুধুমাত্র দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে; গতানুগতিক ধারার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

পরিশেষে --
ভারতবর্ষের রাজনীতিকে রাজনৈতিক মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব সাধারণ জনগণকেই নিতে হবে। এর জন্য খুব বেশী শ্রম দিতে হবে তাও নয় । শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর প্ররোচনায় পা না বাড়িয়ে নিজেকে রাষ্ট্রের গঠনমূলক মূলক কাজ বা আলোচনায় নিয়োজিত করে সামনের দিকে বেগবান হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ  - মূলত এটাই একজন আদর্শ সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য । এরফলে রাজনীতির পৃষ্ঠা থেকে মুছে যেতে পারে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু, দলিত সহ বিভিন্ন যন্ত্রনাদ্বায়ী শব্দগুলো। রাজনীতির অঙ্গনে ফিরে আসতে পারে স্বচ্ছতা ।

ধর্ম নয়! রাজনৈতিক প্রতিযোগীতা হবে উন্নয়ন ভিত্তিক। যা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে।এবং রাজনৈতিক চর্চায় উঠে আসবে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি,সমাজনীতি ইত্যাদি । ---- আসুন আমরা দ্বায়িত্ব নেই, স্বপ্ন দেখি!!

বিজেপির ভোটের রাজনীতি আর মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবনা - শিমুল টিকাদার

লিখেছেন : শিমুল টিকাদার আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ । আমাদের সম্প্রদায়ের বড়ো একটি অংশ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষ...