শিমুল টিকাদার
আমি তখন অফিস থেকে বের হয়ে একটা বাসে উঠে বসেছি । বাসে তখন হাতে গোনা কয়েকজন লোক মাত্র । একটা লোক দাড়িয়ে আর বাকি দু-তিনটে লোক সিটে বসে থাকা কম বয়সী ছেলেটির সঙ্গে কথা বলছিলেন । তাদের খুব কাছাকাছি থাকায় তাদের কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেরেছিলাম এবং তারা আবেগপ্রবণ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন এটা দেখে আমি আরও আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগলাম ।
একটু পরে বুঝতে পারলাম কম বয়সী ছেলেটা উচ্চ-শিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছে তাই তার নিকট-আত্মীয়রা বিদায় জানাতে এসেছেন । দাড়িয়ে থাকা লোকটির ওপর খেয়াল করলাম সে মাঝে-মাঝে শুধুমাত্র ঐ ছেলেটির সঙ্গেই দু একটি কথা বলছেন আর অন্যরা একে অপরের সঙ্গে অনবরত বলেই চলেছেন । বাস তখনও চলতে শুরু করেনি । হঠাৎ ছেলেটি দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে বলল এবার তুমি নেমে যাও - বাড়িতে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করবে আর ঔষধ খেতে একদম ভুল করবে না যেন । আমি ঐ লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম লোকটার দুচোখ ছলছল করছে , যেন চোখের জল বৃষ্টির ন্যায় বেরিয়ে আসার জন্য চোখদুটোতে আকাশরূপী কালো-মেঘে ঢেকে গেছে ।
লোকটা তখন বাস থেকে নেমে গেল ঠিকই কিন্তু বাসের জানালা ধরে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইল । আমি দেখলাম লোকটির চশমার দু-পাশ দিয়ে তখন অঝোর ধারায় জল বেরিয়ে মাটিতে পডছে এবং মাঝে মাঝেই বুড়ো আঙুলের কনুই দিয়ে মোছার চেষ্টা করছেন , যা একটি সম্পূর্ণ আর্তনাদ বিহীন একটি শূন্য হৃদয়ের কান্না । প্রথমে অবশ্য ছেলেটি ওনাকে বার-কয়েক তাড়া করেছিল কিন্তু উনি চলে গিয়েও বারবার বাসের জানালার কাছে ছুটে আসছিলেন ।
একটা সময় ছেলেটির তখন এদিকে আর খেয়াল নেই , সে অন্যদের সাথে তখন কথা বলতে ব্যস্ত । তখনও লোকটি জানালায় হাত রেখে কাঁদছিলেন । হঠাৎ যখন বাসটি চলতে শুরু করল তখন লোকটির কান্না শুধু চোখের জলে সীমাবদ্ধ ছিল না বরং বুক ফাটা আর্তনাদ হয়ে সবার কানে ভেসে আসছিল - আমি পিছন ফিরে শুধু এই দৃশ্য দেখছিলাম । তখন অন্যদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত থাকা ছেলেটি বাসের গেটে ছুটে গিয়ে চিৎকার করে বলল -- বাবা !! তুমি কেঁদনা বাবা । আমি ওখানে ভাল থাকব। মাকে দেখে রেখো বাবা।
কয়েক বার বাবা বাবা ডাক শোনার পর চলতে থাকা বাসটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল