Saturday 28 October 2017

ব্যার্থ কবি


শিমুল টিকাদার

আতঙ্কের ভঙ্গিতে মাটিতে গড়িয়ে পড়া
ছেলেটিকে কবির তুলে ধরার চেষ্টা
চোখে চোখ পড়তেই গভীর উপলব্ধি
থমকে গেছে সময় ।

মলিন মুখ, অসহায় চাহনি, চোখের জল
কবির মনকে আহত করেছে
দু-হাতের আঙুল স্পর্শ করে
কান্নার কারন জানতে চাইলে -
আমাকে মারবেন না স্যার, আমাকে মারবেন না
বাতাসে কান্না-কাকুতি-মিনতির দীর্ঘশ্বাস ।

ওকে সেচ্ছাসেবীরা মেরে পূজা মণ্ডপ
থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে
ওর ময়লা জামা, সর্বশরীরে লেগে থাকা ধুলো
সবার অসস্তির কারণ
ওদের পরনের নতুন কাপড় ছেলেটিকে ছোঁয়নি
লাল-নীল-খয়েরী আলো ওকে স্পর্শ করেনি
এমনকি স্বয়ং দেবী দুর্গাও ওকে দেখে
আজ তুষ্ট হতে পারেননি ।

মাটির বুকে মাথা রেখে ঐ কান্নার
পেছনে এত নিষ্ঠুরতা জেনে
কবি-মন কেঁদে ওঠে
হৃদয়ের গহীনতম প্রদেশ আন্দোলিত হয়
বেজে ওঠে বিষাদের সুর
আর্তনাদে কম্পিত হয় প্রতিটি শিরা ও উপশিরা
ইচ্ছে হয় মাটিতে লুটায়ে
ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে
পরাজয়ের কান্না কাঁদতে ।

কবি অসহায় কবি রক্তাক্ত
বিনয়ী কবি আজ ক্ষুব্ধ
কিন্তু নিরুপায় ।

বাড়ি ফিরে চিরচেনা সেই লগ্ন
ঘরে শুয়ে থাকা অগণিত বইয়েরা দেয় ধ্বনি
দেয়ালের ছবির কন্ঠে বাজে শঙ্খ
কবির রক্তাক্ত হৃদয়ের গর্জনে
আজ কবিতা হবে অশ্রুসিক্ত।

কবি ভাবনার আড়ালে নিরুদ্দেশ
কবিতা আর লেখা হলো না
অসহায় ছেলেটির আর্তনাদের ভর
সাদা কাগজ বোধয় সইতে পারবে না
নীল রঙের কলমটিও আজ বড়ো অসহায়
ওর ভাবনার আড়ালে কবিতার গল্পরা
এত নির্দয় ছিল না ।

কবির চশমার কাঁচের দেয়ালের ওপারে
ঝাপসা আলো, অচেনা পৃথিবী
কল্পানায় তাড়া করে ছেলেটির মলিন মুখ
বেজে ওঠে সেই কন্ঠ -
আমাকে মারবেন না স্যার, আমাকে মারবেন না ।

কবি নীরব
কবি বাকরুদ্ধ
কবির কল্পনাতেই থমকে
কবিতার নিথর দেহ
কবি আজ ব্যার্থ ।

Thursday 26 October 2017

আশ্চর্য এক সন্ধায়..

চন্দ্রিমা উদ্যানের সন্ধ্যা 

শিমুল টিকাদার

শ্রাবণের সন্ধ্যা ছিল সেদিন। চারিদিকে জোৎস্নার আভা। চন্দ্রিমা উদ্যান। জোৎস্নার আলোয় গা ভেসে যাচ্ছিল আমাদের । আমরা বেশ তৃপ্তি নিয়ে তা উপভোগ করেছিলাম । জলের দিকে পা হেলিয়ে গাঢ় খয়েরী রংয়ের ইটের দেয়ালের উপর ১.৫ ইঞ্চি দূরত্বে বসেছিলাম আমরা। মাথার ওপর গাছের পাতারা দুলছিল তখন। সেদিন সকালে খুব বৃষ্টি হয়েছিল । তাই বাতাস ছিল ঠান্ডা ; যা আমাদের মনকে শান্ত রেখেছিল । সেই আশ্চর্য এক সন্ধায় আমরা ছিলাম সম্পূর্ণ নীরব। মুখে কোন কথা না ঝরলেও পরস্পরের আত্মা ঠিকই গল্প/কথা জুড়ে দিয়েছিল (নন ভার্বাল কমিউনিকেশন) । আমরা প্রায়শই এভাবে একে অপরকে উপভোগ করতাম । লেকের ওপারে ল্যাম্প-পোস্টের সারি কিছুটা বিরক্তির কারন ছিল। সেই মুহূর্তে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে যাচ্ছিলাম আমি । জোৎস্নার আলো জলে প্রতিফলিত হয়ে তোমার মুখটিকে গ্রাস করেছে। চন্দ্রমুখী!! গাছের পাতার ঝাপটায় বারবার অন্ধকার হয়ে এসেছিল সেই মুখ । আমি মন ভরে সেই দৃশ্য দেখেছিলাম । তুমি লাল-খয়েরীর উপর কালো ছাপা রঙের সালোয়ার পড়ে এসেছিলে সেদিন। তোমার এই ড্রেসটা আমার খুব প্রিয় ছিল, তুমি জানতে। তোমার মাথা ভরা কোঁকড়ানো চুল আমাকে আকৃষ্ট করত । চুলের কাচা গন্ধে আমি আন্দোলিত হতাম। সেদিনও হয়েছিলাম । শেষ মুহূর্তে আমার হাত স্পর্শ করে তুমি আমার নাম ধরে ডেকেছিলে, যখন আমি মৃদু বাতাসে লেকের জলের ছোট ছোট ঢেউ এবং জোৎস্নার আলোর গভীর মিতালী উপভোগে মগ্ন ছিলাম ।

বিজেপির ভোটের রাজনীতি আর মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবনা - শিমুল টিকাদার

লিখেছেন : শিমুল টিকাদার আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ । আমাদের সম্প্রদায়ের বড়ো একটি অংশ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষ...